ডলারের দাম কমছে, মুদ্রাবাজার শান্ত রাখার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক

ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনে মার্কিন মুদ্রাটির দাম স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় ডলারের দাম কমে আসছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত দুই দিনে ব্যাংকগুলো থেকে ৪৮ কোটি ডলার কিনেছে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তথা মজুত বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশের মুদ্রাবাজারে মার্কিন ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার পর থেকে ব্যাংকগুলো আন্তর্জাতিক চর্চা মেনে নিজেদের মধ্যে নিয়মিত ডলার বেচাকেনা করছে। ফলে দীর্ঘদিন পর মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফিরে এসেছে। রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের ডলার কেনায় ব্যাংকগুলো বেশ সংযত। অর্থাৎ তারা কম দামে প্রবাসী আয় কিনছে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা আগের চেয়ে কম দামে ডলার পাচ্ছেন। আর উদ্বৃত্ত ডলার নিলামের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক কিনতে শুরু করেছে। এভাবে ডলারের দামে অস্বাভাবিক ওঠা–নামা ঠেকানো যাচ্ছে।
বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ডলারের বাজারে স্বস্তি ফিরে আসায় এখন আমদানি বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার সময় এসেছে। পাশাপাশি বিলাসপণ্য আমদানিতে যেসব বাড়তি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো তুলে নিতে হবে। তাহলে আমদানি বাড়বে, যা ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফেরানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।
টানা চার দিন কমার পর মঙ্গলবার দেশের মুদ্রাবাজারে মার্কিন ডলারের দাম বেড়েছে। চলতি মাসে গত সোমবার পর্যন্ত ডলারের দাম কমেছে। তবে মঙ্গলবার এক দিনেই ডলারের দাম বেড়েছে ১ টাকা ৪০ পয়সা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, দেশের মুদ্রাবাজারে গতকাল ডলার সর্বোচ্চ ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হয় এবং সর্বনিম্ন ১২০ টাকা ৮০ পয়সায় কেনা হয়। গত সোমবার ডলার বেচাকেনা হয় যথাক্রমে ১২০ দশমিক ১০ টাকা ও ১১৯ টাকা ৫০ পয়সায়। এদিন ডলারের গড় দাম ছিল ১২১ দশমিক ১১ টাকা, অর্থাৎ ডলারের বিক্রয়মূল্য বেড়েছে ১ টাকা ৪০ পয়সা।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার নিলামের মাধ্যমে ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার কিনেছে। এই ডলার বিক্রি করেছে ২২টি ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি ডলার কিনেছে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দামে। এর আগে গত রোববার এই প্রক্রিয়ায় ১৭ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, বকেয়া আমদানি দায় পরিশোধ হয়ে যাওয়ায় ডলারের চাহিদা কমেছে। অন্যদিকে দেশে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ ও রপ্তানি আয় বেড়েছে। ফলে ডলারের সংকট কেটে গেছে। এদিকে ডলারের দাম কমায় আমদানিতে স্বস্তি দেখা যায়। অন্যদিকে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনেছে।
দেশে প্রায় তিন বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষের যে ভোগান্তি বাড়ছে, তার অন্যতম কারণ ডলারের উচ্চ দাম। ডলারের দাম কমলে তা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়। অন্তর্বর্তী সরকারেরও অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। বর্তমানে ডলারের দাম যে পর্যায়ে রয়েছে, সেটাকে স্বাভাবিক বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ জন্য দাম ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ব্যাংকগুলো এখন প্রবাসী আয়ের ডলার ১২১ টাকায় কিনছে, যা এক মাস আগে ১২৩ টাকার ওপরে ছিল। ডলারের দাম কমলেও অবশ্য প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়ছে। যদিও ব্যবসা-বাণিজ্যে একধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। আমদানিতে গতি নেই। ঋণপত্র খোলার হার কমছে। ব্যাংকগুলোয় ডলারের চাহিদা কম।