দেখলাম পরীক্ষার্থীরা এআই দিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে, প্রিন্সিপাল চা খাচ্ছেন: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একটি কলেজে পরীক্ষার্থীরা যখন পরীক্ষা হলে বসে মোবাইল খুলে এআই দিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছল, তখন প্রিন্সিপাল তার অফিসে চুপচাপ বসে চা খাচ্ছিলেন। এমনকি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে যারা পরীক্ষা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন, তারাও প্রিন্সিপাল সাবেহের রুমে বসে ছিলেন।
শনিবার গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ৩৬৫দিন’ অনুষ্ঠানে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বস্থা নিয়ে এমন ভয়াবহ তথ্য দিলেন খোদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য প্রফেসর এ এস এম আমানুল্লাহ।
তিনি বলেন, এই নৈতিকতা আমরা কীভাবে ঠিক করবো, যেখানে ফিজিক্সের টিচার ফিলোসফির ইনকোর্স পরীক্ষার মার্কস দেয়। এটা কলেজের প্রিন্সিপালও জানেন। দেশব্যাপী অনার্স মাস্টার্স কলেজ খোলা হয়েছে, সেখানে ল্যাব নাই। যেখানে ল্যাব আছে, একটা ল্যাবও হয় না।। আপনি চিন্তা করে দেখেন, কোনো ল্যাব হয় না, না ফিজিক্স, কেমেস্ট্রি, ম্যাথ, বায়োলজি... কোন ল্যাব হয় না। ১০০ মার্ক ওনারা দিয়ে দেন। তাহলে এরকম অবস্থায় ল্যাব ছাড়া পাস করে যাচ্ছে। একজন প্রিন্সিপাল, ফিজিক্সের শিক্ষক মার্কস দিয়ে দিচ্ছেন। এই জায়গা থেকে বের হয়ে আসবো কীভাবে?
প্রফেসর আমানুল্লাহ বলেন, এই যে আমরা কথায় কথায় সুশাসনের কথা বলি, ৫০০টি উপজেলায় চারজন করে ওই শিক্ষক খুঁজে পাচ্ছি না- যিনি পরীক্ষা ও ল্যাব ঠিক মতো নিতে পারবেন। এই দুই হাজার ফেরেস্তা কই পাবো? যাকে বিশ্বাস করি, তারই সমস্যা। দশজন শিক্ষক তিনটা গ্রুপ।
বিভিন্ন কলেজের গভর্নিং বডি নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেন, নব্বই বছর বয়সী ব্যক্তিও কলেজের ম্যানেজমেন্ট বডির সদস্য হতে চান। এটা নাকি তার ইজ্জতের ব্যাপার। চট্টগ্রামে ১০ হাজার কোটি টাকার মালিক। তাকেও প্রিন্সিপাল নিয়োগ দিতে হবে। আমি বলি কেনো? তিনি বলেন- এটা আমার ফ্যামিলি প্রেস্টিজের সঙ্গে জড়িত, আমার প্রেস্টিজের সঙ্গে জড়িত। কলেজের গভর্নিং বডিতো বিশ্বের অনেক দেশে নাই। ভারতে নাই, পাকিস্তানে নাই, তাহলে আমাদের এখানে কেন? বেসরকারি কলেজের গভর্নিং বডিগুলোই ঝামেলাপূর্ণ। এক একটা কলেজকে ৫০ থেকে ৯০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে এই পালন, সেই পালন, পিকনিক করতে। এখানে কীভাবে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হবে বুঝতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, এমপিওভুক্ত কলেজে শিক্ষকদের বছরে ২০০ কোটি টাকা এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষকদের ১০০ কোটি টাকা বেতন দেওয়া হচ্ছে। এর বিনিময়ে কী পাচ্ছি? বছরে বের হওয়া ১০ লাখ গ্রাজুয়েটের ৪০ শতাংশ বা ৪ লাখ চাকরি পাচ্ছে না। যে শিক্ষা তাদের চাকুরি দিতে পারছে, সে শিক্ষা তাকে কেন দিচ্ছি।
আমরা চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের উপযোগি হয়ে ওঠার কথা বলি। বাস্তবে আমাদের সিলেবাস প্রথম শিল্প-বিপ্লবেরই চাহিদা পূরণ করার সক্ষমতা রাখে না বলেও আক্ষেপ করেন প্রফসর আমানুল্লাহ।
তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রম দেশের কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে কোনো সংযোগ নেই। গত ৫৩ বছরে মানসম্পন্ন শিক্ষা চালুর ট্রেনটি ‘মিস’ করেছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৪০ লাখ। আদতে এখানে শিক্ষার্থী নেই, এটা পরীক্ষার্থীদের মেলা। একটা প্রতিষ্ঠান দেশের ৭০ শতাংশ উচ্চশিক্ষা দেয়। এটা বাস্তবসম্মত কিনা, তা এত বছরেও কেউ প্রশ্ন তুলল না। বাকি ১১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়, বাকি ৩০ শতাংশ।
প্রাথমিক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় সংস্কার দরকার বলে জোর দিয়ে তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে আর অদক্ষ কর্মী নেবে না। এজন্য এই সেমিস্টার থেকে ডিগ্রি পর্যায়ে আইসিটি ও ইংরেজি বাধ্যতামূলক করেছি। অনেকে বলেছিল- প্রতিবাদ হবে, আদতে হয়নি। প্রতিবাদ আছে- অটোপাস নিয়ে। অটোপাসে আমরা যাচ্ছি না, নো অটো পাস।
মন্তব্য
সর্বশেষ সংবাদ
আরও পড়ুন

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৫ | ১১:৪৬

প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৫ | ১১:০৬

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৫ | ১২:৪১

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৫ | ০৩:৫৯

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫ | ০১:৫৭