রয়টার্সের প্রতিবেদন

মিয়ানমারের বিরল খনিজে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র, বিদ্রোহীদের পক্ষে টানছে ট্রাম্প প্রশাসন

মিয়ানমারের বিরল খনিজে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র, বিদ্রোহীদের পক্ষে টানছে ট্রাম্প প্রশাসন
ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারের বিরল খনিজ সম্পদে নজর পড়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের। খনিজ উৎস থেকে চীনকে দূরে সরিয়ে রাখতেই নীতিগত পরিবর্তনের চিন্তা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ লক্ষ্যে জান্তা সরকার ও জাতিগত বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

মিয়ানমারের খনিজ নিয়ে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সংঘর্ষ আরও তীব্র হতে পারে বলেই ধারণা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারের রয়েছে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দুর্লভ খনিজ সম্পদ। আর চীনের অন্যতম প্রধান খনিজ আহরণের উৎস এগুলো।

মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যে থাকা হেভি রেয়ার আর্থস আমদানির প্রস্তাব নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কেউ কেউ প্রস্তাব দিয়েছেন, সেনা সরকার ও কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মির (কেআইএ) মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতা করতে পারে। আবার কেউ কেউ সেনা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়াই কেআইএর সঙ্গে সরাসরি চুক্তির পরামর্শ দিয়েছেন।

হেভি রেয়ার আর্থস হলো এমন কিছু খনিজ, যা উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্র ও যুদ্ধবিমানে ব্যবহৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্র নিজে খুব অল্প পরিমাণ হেভি রেয়ার আর্থস উৎপাদন করে। ফলে দেশটি এগুলো আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে এই খনিজ প্রক্রিয়াজাতকরণের ৯০ শতাংশই চীনে হয় বলে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা জানিয়েছে।

মিয়ানমারের সেনা শাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যা দেওয়ার পরও কাচিন অঞ্চলের খনিজ আহরণ নিয়ে ওয়াশিংটনে নীতিগত আলোচনার খবর উঠে এসেছে।

গত ১৭ জুলাই ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে এই খনিজ খাত নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মিয়ানমারে মার্কিন চেম্বার অব কমার্সের সাবেক প্রধান এবং বর্তমানে দেশটিতে একটি নিরাপত্তা কোম্পানির পরিচালনায় থাকা অ্যাডাম ক্যাসটিলো।

ক্যাসটিলো বলেছেন, কাচিনের জাতিগত বিদ্রোহীরা চীনের দ্বারা শোষণের শিকার হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে পরামর্শ দিয়েছেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও কেআইএর মধ্যে স্বায়ত্তশাসনের ভিত্তিতে একটি চুক্তি করাতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে। এতে চীনের প্রভাব কমবে এবং যুক্তরাষ্ট্র নিজস্ব খনিজ চেইন গড়ে তুলতে পারবে।

এদিকে, অং সান সু চির সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা শন টারনেলও যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি বিরোধী দলের প্রতি সমর্থন বজায় রেখে কেআইএর মাধ্যমে খনিজ আহরণে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিনির্ধারকরা এখনও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাননি। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই আলোচনাগুলো এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে এবং বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কম।

সূত্র জানিয়েছে, মিয়ানমারের খনিজ অঞ্চল কাচিন এখন কেআইএর নিয়ন্ত্রণে। ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা সম্প্রতি কাচিনের চিপওয়ে-পাংওয়া খনিজ অঞ্চলের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তবে খনিজগুলো সরিয়ে ভারতের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে আনার জন্য যে অবকাঠামো দরকার, তা এখনও অনুপস্থিত।

বিশ্লেষক বারটিল লিন্টনার বলেন, মিয়ানমারের চীনা সীমান্তবর্তী খনিজ অঞ্চল থেকে ভারতে খনিজ সরানো কঠিন হবে। একটি মাত্র রাস্তা আছে, আর চীন নিশ্চয়ই বাধা দেবে।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ