গাজা দখলে নিতে চান নেতানিয়াহু, সেনাবাহিনী ও জনগণ কী ভাবছে?

দীর্ঘ ২২ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, ৬১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনির মৃত্যু এবং গাজা উপত্যকাকে দুর্ভিক্ষের কিনারায় ঠেলে দেওয়ার পরও থামছে না ইসরাইলি আগ্রাসন। বরং দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এখন পুরো গাজা দখলের পরিকল্পনা করছেন—যা আন্তর্জাতিক, অভ্যন্তরীণ এবং সামরিক স্তরে ব্যাপক বিরোধিতার মুখে পড়েছে।
ইসরাইলি গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি—গাজার পুরো দখলেই যাচ্ছি।
গত মঙ্গলবার শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে নেতানিয়াহু সেনাবাহিনীর মাধ্যমে গাজার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন, যদিও এতে গাজায় আটক থাকা ইসরাইলি বন্দিদের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বাধীন অভিযানে ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চল থেকে বহু ইসরাইলিকে বন্দি করা হয়। যুদ্ধের শুরু থেকেই এই বন্দিদের উদ্ধারই ছিল নেতানিয়াহুর অন্যতম লক্ষ্য। তবে টানা ধ্বংসযজ্ঞ, গণউচ্ছেদ ও দুর্ভিক্ষের মাঝেও বহু বন্দি এখনও মুক্ত হননি। কারণ, যেসব এলাকায় তাদের রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়, সেগুলো এখনও ইসরাইলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
ক্ষমতা রক্ষার অপকৌশল?
বিষয়টিকে ক্ষমতা রক্ষার অপকৌশল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। কিংস কলেজ লন্ডনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সাবেক ইসরাইলি সেনা কর্মকর্তা আহরন ব্রেগম্যান বলেন, নেতানিয়াহু যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান—সময় চান। যাতে করে জোট ধরে রাখা যায় এবং তার বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করা যায়।
গাজা দখলের পরিকল্পনার পেছনে নেতানিয়াহুর আসল উদ্দেশ্য নিয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ মনে করছেন, এটি হয়তো হামাসকে আলোচনায় ফিরিয়ে আনার একটি চাপ প্রয়োগের কৌশল। আবার কেউ বলছেন, এটা হতে পারে গাজা থেকে হামাসকে সম্পূর্ণ নির্মূল করার প্রচেষ্টা, যেখানে গাজাবাসীর মনোবল ভেঙে দিয়ে তাদের তথাকথিত ‘ঘনবসতিপূর্ণ ক্যাম্পে’ সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সেনা ও জনতা
ইসরাইলি বিশ্লেষক নিমরোদ ফ্লাশেনবার্গ বলেন, নেতানিয়াহু জনমত বা বিক্ষোভের তোয়াক্কা করেন না, তিনি শুধু ডানপন্থি ভোটারদের সন্তুষ্ট রাখতে চান।
তিনি আরও বলেন, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মধ্যে চরম ক্লান্তি, পোস্ট ট্রমেটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি) এবং ব্যাপকভাবে সেনা প্রত্যাখ্যান দেখা যাচ্ছে। এপ্রিল মাসে +972 ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সেনাসংকট এক লাখেরও বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ‘গ্লোবাল গার্ডিয়ান’-এর সাবেক কর্নেল সেথ ক্রুমরিচ বলেন, গাজা পুরোপুরি দখলে রাখা অবাস্তব। এতে বিপুল সংখ্যক সেনা ও সম্পদের প্রয়োজন। ইসরাইলি সমাজ এই পর্যায়ের সামরিক অভিযানকে সমর্থন দেবে না।
শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের বিরোধিতা
নেতানিয়াহুর যুদ্ধনীতির বিরোধিতা করেছেন অনেক উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা, এমনকি ইসরাইলি সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আয়াল জমিরও গাজায় আর কোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার ৬০০-এর বেশি সাবেক ইসরাইলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি খোলা চিঠি লিখে যুদ্ধ বন্ধে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান। ‘কমান্ডারস ফর ইসরাইলস সিকিউরিটি (সিআইএস)’ নামক সংগঠনটি জানায়, হামাস এখন আর ইসরাইলের জন্য কৌশলগত হুমকি নয়।
সাবেক শিন বেত প্রধান অ্যামি আয়োলন বলেন, সামরিক দিক থেকে হামাস ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু আদর্শিক দিক থেকে তারা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে—ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে, আরব বিশ্বের রাস্তায়, এমনকি গোটা ইসলামি দুনিয়ায়।
ক্রুমরিচের মতে, যদ্ধ দীর্ঘ হলে তার দায় সেনাপ্রধানদের উপরই পড়বে। আর এই ধরণের মিশনে সেনাদের মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতি এবং বিশ্বাস থাকা জরুরি।
জনগণের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ?
জনগণের বিরুদ্ধেই যেন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন নেতানিয়াহু—এমনটাই মত অনেক বিশ্লেষকের। সম্প্রতি ইসরাইলের চ্যানেল ১২-এর এক জরিপে দেখা যায়, বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন নেতানিয়াহু যুদ্ধ জেতার চেয়ে ক্ষমতায় থাকার চিন্তায় বেশি মগ্ন।
চ্যাথাম হাউসের অধ্যাপক ইয়োসি মেকেলবার্গ বলেন, নেতানিয়াহু বাস্তবতা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। কোনো বিবেকবান মানুষ হলে বহু আগেই পদত্যাগ করতেন। কিন্তু তার সবকিছু এখন শুধুই রাজনৈতিক বেঁচে থাকার লড়াই।
সূত্র: আল-জাজিরা
মন্তব্য
সর্বশেষ সংবাদ
আরও পড়ুন

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৫ | ০৫:২৬

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৫ | ০৩:২৬

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৫ | ১১:২৫

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৫ | ০৩:২১

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৫ | ০৫:১২

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৫ | ০৫:০৪