ঐকমত্য কমিশন ব্যর্থ হলে, সেই ‘ব্যর্থতা সবার’: আলী রীয়াজ

ঐকমত্য কমিশন ব্যর্থ হলে, সেই ‘ব্যর্থতা সবার’: আলী রীয়াজ
ছবি: সংগৃহীত

রাষ্ট্র সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ কোনো কারণে ব্যর্থ হলে তার দায়ভার সংশ্লিষ্টদের সবাইকে ‘নিতে হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ।

তিনি বলেন, ‘যদি আমরা কোথাও ব্যর্থ হই, সে ব্যর্থতা আমাদের সকলের। কমিশনের ব্যর্থতা যদি হয় তাহলে এটা সকলের মিলে ব্যর্থতা হবে। সেই জায়গায় আমাদেরকে বিবেচনা করতে হবে। ব্যর্থ হওয়ার কোন সুযোগ নেই। যে দায় দায়িত্ব আমাদের উপর অর্পিত হয়েছে। সে দায়িত্ব রাজনৈতিক দল হিসেবে আপনাদের উপর আমরা তার অংশীদার হয়েছি মাত্র।’

মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৪তম দিনের সূচনা বক্তব্যে কথা বলছিলেন আলী রীয়াজ।

এ দিনের আলোচ্য সূচিত দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, সংবিধান সংশোধন এবং সংসদের নারী আসন বিষয়গুলো রাখা হয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলোকে এক বছর আগের পরিস্থিতি অনুবাধন করার অনুরোধ জানিয়েছেন আলী রীয়াজ।

জুলাই আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ, আপনারা সকলে, আপনাদের কর্মীরা প্রাণ বাজি রেখে লড়াই করেছিলেন বলে আমরা এখানে আসতে পেরেছি। সেই জায়গার সেই স্মৃতি, সেই পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করলে আমাদের উপর যে দায়িত্ব, সে দায়িত্ব পালনে আমাদের চেষ্টার কোন ঘাটতি থাকার কথা নয় এবং আপনারা সেই চেষ্টা করছেন। আমরা সকলে মিলে সেই চেষ্টা করছি।’

চলতি মাসের মধ্যেই জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার লক্ষ্য ঠিক করে কাজে নেমেছে এই কমিশন।

এর আগে আলী রীয়াজ বলেছিলেন কিছু মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর মাধ্যমে একটি জাতীয় সনদে উপনীত হতে হবে।

সে লক্ষ্যে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে যে কোনো প্রক্রিয়ায় কাজ সারার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেছিলেন, বড়জোর ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় নেওয়া হতে পারে কমিশন তৈরিতে।

মাসের মাঝামাঝি কমিশনের সভাপতি বলছেন, সময়ের স্বল্পতার কারণে আলোচনার ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত অগ্রগতি ‘অর্জন করা যাচ্ছে না’।

তিনি বলেন, ‘কিন্তু এই সপ্তাহের পরে সময়ের স্বল্পতা এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়াবে যে, আমাদেরকে বাস্তবত খুব দ্রুততার সঙ্গে কিছু কিছু বিষয়ের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আশা করছি যেগুলো আপনারা বিবেচনায় রাখবেন। নিষ্পত্তিহীন বিষয়গুলো আপনারা জানেন।’

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে কমিশনের সহসভাপতি বলেন, ‘সকলে মিলে আমাদের একটি জাতীয় সনদ তৈরি জায়গায় যেতে হবে। যতদূর সম্ভব সকলে মিলে যেতে হবে। সেজন্য আমাদের প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু অবস্থানগত পরিবর্তন আপনারা অব্যাহত রাখবেন আশা করি। কিন্তু সময়ের স্বল্পতার একটা বিবেচনাটা করুন। যাতে করে আমরা খুব দ্রুত জুলাই মাসের মধ্যেই একটা জাতীয় সনদ প্রণয়ন করতে পারি। মৌলিক বিষয়গুলোকে যেন এই জাতীয় সনদে সকলের বা অধিকাংশের বা যতদূর সম্ভব সকলের মতামতের মধ্যে দিয়ে আমরা এক জায়গায় আসতে পারি।’

দায়িত্ব নেওয়ার পরে কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগীর ভূমিকা পালন করছে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের সকলে মিলেই সফল হতে হবে। সে সাফল্যের মাপকাটি হচ্ছে আমরা একটা কাঠামোগত সংস্কারের ব্যাপারে একমত হতে পারছি কি, পারছি না। কিছু কিছু জিনিস আমরা ইতিমধ্যেই একমত হয়েছি। কিছু বিষয়ে আপনারা প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় একমত হয়েছেন। আর কিছু নিষ্পত্তিহীন অবস্থায় আছে। এগুলো আমরা আলোচনা করব।’

আগামী কয়েকদিনের আলোচনায় সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা যেন আমাদের প্রত্যেকের দায় এবং দায়িত্ব অনুভব করি। আমরা যেন স্মরণ করি যেন আমরা কিভাবে এইখানে এসে উপস্থিত হতে পেরেছি। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে কি প্রত্যাশা মানুষের এবং সেই প্রত্যাশা পূরণে আমরা প্রত্যেকেই কে ভূমিকা পালন করলাম।’

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান এবং আইয়ুব মিয়া।