ইন্টারনেট বন্ধ করার সুযোগ টেলিযোগাযোগ আইন থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশনা

ইন্টারনেট বন্ধ করার সুযোগ টেলিযোগাযোগ আইন থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। টেলিযোগাযোগ-ব্যবস্থায় আড়ি পাতার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রীতি অনুসরণের নির্দেশও দিয়েছে তারা।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গত সোমবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যানকে এক চিঠিতে টেলিযোগাযোগ আইনের সংশোধন ও পরিমার্জনের নির্দেশনাগুলো দেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
চিঠিতে টেলিযোগাযোগ আইনের একটি খসড়া করতেও বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ এমদাদ উল বারী বলেন, বিটিআরসি আইনটি নিয়ে কাজ করছিল। মন্ত্রণালয়কেও চিঠি দেওয়া হয়েছিল। সে পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় নিজেদের কিছু চাওয়ার বিষয় জানিয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে একটি খসড়া মন্ত্রণালয়কে পাঠাতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বিগত বছর আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিটিআরসি টেলিযোগাযোগ আইন নতুন করে করার উদ্যোগ নিয়ে খসড়া প্রস্তুত করেছিল। ইন্টারনেট বন্ধের সুযোগ রাখা হয়েছিল। আড়ি পাতা-সংক্রান্ত বিধানও ছিল আগের মতোই। অন্তর্বর্তী সরকার এই দুই বিষয় ছাড়াও নানা ক্ষেত্রে ভিন্ন অবস্থান নিচ্ছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় আওয়ামী লীগ সরকার টানা পাঁচ দিন সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে রেখেছিল। এর পাশাপাশি বিভিন্ন সময় তারা এলাকাভিত্তিক ইন্টারনেট বন্ধ রাখত। বিশেষ করে বিএনপির জনসভাকেন্দ্রিক ইন্টারনেট বন্ধ রাখার ঘটনা ঘটত। টেলিযোগাযোগ আইনের সংশ্লিষ্ট ক্ষমতার অপব্যবহার করা হতো তখন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সরকারি বা বেসরকারিভাবে কেউ যেন ইন্টারনেট বন্ধ করতে না পারে, সে লক্ষ্যে টেলিযোগাযোগ আইন ২০০১ সংশোধন ও পরিমার্জন করতে হবে।
আইনের খসড়ায় আড়ি পাতার বিষয়ে আন্তর্জাতিক মান নিয়ে আসার বিষয়টি আনতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) প্রশ্নে ‘বৈধতার প্রশ্ন তৈরি করার’ কথাও উল্লেখ আছে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ‘শুধু একটি এজেন্সিকে গেটওয়ে করে বাকি আইনানুগ আড়ি পাতা এজেন্সিদের আড়ি পাতায় কোয়াসি বা প্যাসিভ জুডিশিয়াল একনলেজমেন্টে রেখে আড়ি পাতার কাঠামোগত এবং আন্তর্জাতিক মান তৈরি করতে হবে।’ অর্থাৎ আড়ি পাতার বিষয়টি আধা বিচারিক প্রক্রিয়ায় আনার কথা বলা হয়েছে।
নির্দেশনায় বিটিআরসির স্বাধীনতা ও জবাবদিহির বিষয়টিও রয়েছে। এতে মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি কমিয়ে আনা; বিটিআরসির নিয়োগপ্রক্রিয়া স্বচ্ছ করা; লাইসেন্স প্রদান, লাইসেন্স নবায়ন, লাইসেন্সের নাম পরিবর্তন ও লাইসেন্সের শেয়ার হস্তান্তর বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা; বকেয়া আদায়, রাজস্ব লিকেজ (বিভিন্নভাবে ফাঁকি) ইত্যাদিতে জবাবদিহি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে সরকারের ‘রুল অব বিজনেস’ এবং ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস’ (মূলত কার্যপরিধি) অনুসারে বিটিআরসির স্বাধীনতা ও জবাবদিহির ব্যবস্থা করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে টেলিযোগাযোগ বিভাগের চিঠিতে। এতে আরও বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের ওপর অর্পিত দায়িত্বের প্রশ্নে এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতির প্রাসঙ্গিকতা থাকবে। তবে কোনো অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে, ট্যারিফ (সেবামূল্য) নির্ধারণে মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি তুলে দেওয়ার বিধান করতে হবে।
মন্ত্রণালয়ের অধীন ছয়টি টেলিযোগাযোগ কোম্পানি, বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবাসংক্রান্ত লাইসেন্স এবং কোম্পানিগুলোর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করা ও শুধু সেসব বিষয়ে পূর্বানুমতির বিধান রেখে বাদবাকি জায়গায় বিটিআরসির পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করে আইন সংশোধন করতে হবে, বলা হয় চিঠিতে।
টেলিযোগাযোগ বিভাগ মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক মানের কেপিআইয়ের (পারদর্শিতার মান) বিধান আনার কথা বলেছে। তবে বিনিয়োগকারীদের অপ্রয়োজনীয় ভয়ভীতি দেখানোর ধারা সংশোধন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
টেলিযোগাযোগ লাইসেন্স এবং সেবাসংক্রান্ত বিষয়ে দেওয়ানি, ফৌজদারি অপরাধের সীমা নির্ধারণ করে আইন হালনাগাদ করার কথাও বলেছে টেলিযোগাযোগ বিভাগ। চিঠিতে নির্দেশনা অনুযায়ী টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১-এর সংশোধন ও পরিমার্জন করে এ-সংক্রান্ত খসড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
সরকারের নির্দেশনার উদ্দেশ্য ভালো উল্লেখ করে ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, আইনটি সময় নিয়ে বিশদ আলোচনা করে করতে হবে। ভোক্তার অধিকার ও মানবাধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে আইন করা প্রয়োজন।
মন্তব্য
সর্বশেষ সংবাদ
আরও পড়ুন

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৫ | ০৯:০৩

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৫ | ০৭:৪১

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৫ | ০৫:৩৪

প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৫ | ০৩:৩৮

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৫ | ০৮:৩৪

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৫ | ০৬:০৩