উত্তরায় স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত: শিশুদের আর্তনাদে ভারি পুরো দেশ, স্বজনদের মাতম
- ২৪ জুলাই ২০২৫, ২১:৫৭

স্কুলে ছুটির আনন্দে মশগুল শিশুরা। আছড়ে পড়া যুদ্ধবিমান। পুড়ে যাওয়া কচি মুখ। মায়ের আর্তনাদ। বাবার নির্বাক ছোটাছুটি। স্বজনের মাতম। উদ্ধারকর্মীদের প্রাণান্ত লড়াই। রাস্তায় রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন। হাসপাতালে ডাক্তার-নার্সদের ছোটাছুটি। রক্তের জন্য আবেদন।
এর মাঝে ঝরে গেল ২০টি তাজা প্রাণ। ১৭ জনই শিশু শিক্ষার্থী। হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে আরও ১৭১ জন। তারা দগ্ধ, আহত। দগ্ধদের ২৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
গতকাল সোমবার; বেদনায় ভরা এক দিন। রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে ওঠা শিশুদের আর্তনাদে ভারি হলো পুরো শহর, দেশ।
স্কুলের শিক্ষিকা পূর্ণিমা দাশ ফেসবুকে লিখেছেন, স্কুল ছুটি হয় দুপুর ১টায়। এরপর দুই ঘণ্টা কোচিং। তাই কিছু ছাত্রছাত্রী স্কুলে ছিল। আর যাদের অভিভাবক তখনও শিশুদের নিতে আসেননি, তারাই কেবল অপেক্ষায় ছিল। ততক্ষণে ৮০ ভাগ বাচ্চা বাড়ি চলে গেছে।
পূর্ণিমা দাশ লিখেছেন, দুপুর ১টা ১০ কি ১৫ মিনিট হবে। একটি বিমান (বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান) এসে আছড়ে পড়ে স্কুলের হায়দার আলী ভবনে। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়। ওই ভবনে বাংলা ভার্সনের তৃতীয় থেকে পঞ্চম এবং ইংরেজি ভার্সনের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির বাচ্চাদের ক্লাস হয়। আমিও ওখানে ক্লাস নিই। ক্লাস শেষ করে ঠিক যেখানে বিমান আঘাত করেছে, ওই করিডোর পার হয়ে শিক্ষকদের কক্ষে গেছি। তখনই ভয়ানক শব্দ। কিছু বোঝার আগেই দেখি, ছোট ছোট বাচ্চা দৌড়ে আসছে। তাদের সারা গায়ে আগুন।
জানা গেছে, ভবনটির একতলায় যেসব শিশু ও শিক্ষকরা ছিলেন, বিধ্বস্ত বিমানের আগুন শুরুতেই তাদের গ্রাস করেছিল। নিহতদের মধ্যে বিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামও রয়েছেন। গতকাল ছিল তার একক উড্ডয়ন।
আজ মঙ্গলবার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার। ভারত-পাকিস্তানসহ একাধিক দেশ, জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সংস্থা শোক জানিয়েছে। এই শোকাবহ ঘটনার প্রেক্ষাপটে জুলাই ‘পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠানমালার সব অনুষ্ঠান তিন দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজিআই ফাইটার জেটটি সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়ন করে। ১২ মিনিটের মাথায় বিধ্বস্ত হয়। কারণ উদ্ঘাটনের জন্য বিমানবাহিনী উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
দুর্ঘটনার পর সেনা, বিমান, পুলিশ, র্যাব এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মিলে উদ্ধারকাজে অংশ নেয়। উদ্ধার তৎপরতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তিন প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশও (বিজিবি) যোগ দেয়। সেনাবাহিনী প্রধান, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগসহ সামরিক বাহিনী এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে যান। গতরাত ৮টা ৫০ মিনিটে সেনাবাহিনীর কয়েকটি পিকআপভ্যান ও কাভার্ডভ্যানে বিমানের ধ্বংসাবশেষ বের করে নেওয়া হয়।
স্কুলে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে অভিভাবক ও স্বজনরা ছুটে যান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সামনে। প্রবেশপথসহ আশপাশে উদ্বিগ্ন অভিভাবকের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। নিখোঁজ সন্তানের সন্ধানে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। তাদের আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে বাতাস। স্কুলের ভেতর থেকে হতাহতদের নিয়ে একের পর এক বের হয় অ্যাম্বুলেন্স। উৎসুক জনতার ভিড় উদ্ধারকর্মীদের কাজে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটায়।
স্কুলের হায়দার আলী ভবনটি তিনতলা। নিচতলা মাটির নিচে। প্রথম তলায় তৃতীয় ও চতুর্থ এবং দ্বিতীয় তলায় দ্বিতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম চলত। হঠাৎ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা দিশেহারা হয়ে পড়ে। আশপাশের ভবন থেকে দৌড়ে মাঠে ছুটে যায় অনেক শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা
দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে ছিলেন নিরাপত্তাকর্মী আকবর হোসেন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার সময় পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছুটি হয়েছিল। শিক্ষার্থীরা কেবল বের হচ্ছিল। এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। তাকিয়ে দেখি, বিমান নারিকেল গাছ ভেঙে ভবনের নিচে মাটির ভেতর ঢুকে যায়। পেছনের কিছু অংশ বাইরে বেরিয়ে ছিল। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়। ধোঁয়ায় পুরো এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। শিশুদের চিৎকার, আর্তনাদ ভেসে আসে। তিনি জানান, তিনতলা ভবনের নিচতলা মাটির নিচে, সেখানে ক্লাস হয় না। বিমানটি সেখানে ঢুকে পড়ে।
স্কুল ভবন থেকে ১০০ গজের মধ্যে মোহাম্মদ জইমত আলীর এক্সক্যাভেটর মেরামতের গ্যারেজ। সেখানে চালক আপন আহমেদ কাজ করছিলেন। উড়োজাহাজ খুব নিচু দিয়ে উঠতে দেখে তারা দুজনে কিছুটা অবাক হয়েছিলেন। মুহূর্ত পরেই বিকট শব্দ শুনে তারা প্রথমে ছুটে যান পাশের মেট্রোরেলের ডিপোর দিকে। পরে তারা দেখেন, স্কুল থেকে আগুন বের হচ্ছে।
দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ইসমাইল আহমেদ বলেন, সাততলা কলেজ ভবনে আমাদের পরীক্ষা চলছিল। একটি বিকট শব্দের পরই বিমানটি ভবনের নিচে ঢুকে আগুন ধরে যায়। সবাই দৌড়াদৌড়ি, ছোটাছুটি করছে। তার পর দেখি ফায়ার সার্ভিস। আগুন নেভাতে বেশি সময় লাগেনি; কিন্তু ভেতরে অনেক শিক্ষার্থী ছিল। ছোট বাচ্চারা ছিল।
শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম রিকসান গতকাল বিকেল ৪টায় পোড়া ভবনটির পেছনের দিকে স্বেচ্ছসেবক হিসেবে কাজ করছিলেন। রিকসান বলেন, ঘটনার পরই আমরা এখানে এসেছি। পোড়া শরীরে বাচ্চারা দলা হয়ে পড়ে ছিল।
স্কুলের পাশের সড়কে কাজ করা এক নারী বলেন, যে যেভাবে পারছে, ছোটাছুটি করছে। অনেকের শরীর পুড়ে গেছে। অধিকাংশেরই শরীরে কাপড় ছিল না। চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাসেল জানায়, সে কোচিং করে না। তার অনেক বন্ধু সে সময় স্কুলে ছিল। শিক্ষক রাসেল আহমেদ জানান তাঁর স্কুলপড়ুয়া মেয়েও দগ্ধ হয়েছে।
শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা জানান, যে ভবনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয় তার দোতলায় ক্লাস ছুটির পর ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির কিছু শিক্ষার্থীর কোচিং চলছিল। ওই শিক্ষার্থীরা সেখানে আটকা পড়ে। সেখানে প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিবেদক সেলিম জাহিদের ছেলেও ছিলেন। আনুমানিক দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর তাদের উদ্ধার করা হয়।
ঘটনাস্থলে যা দেখা গেল
বিকেল সাড়ে ৩টায় উৎসুক জনতার ভিড় ঠেলে বিধ্বস্ত স্কুলভবনটির পেছনের অংশে গিয়ে দেখা যায়, বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ ভবনের পেছনের অংশে স্তূপ করে রাখা। পেছনের একটি জানালা ভেঙে পড়ে আছে। জানালা দিয়ে শ্রেণিকক্ষের ধ্বংসস্তূপ দেখা যায়। কোনোকিছুই অবশিষ্ট নেই। সব পুড়ে অঙ্গার। স্বেচ্ছাসেবীদের একজন বলেন, ‘আমি মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী। ঘটনার সময় ছিলাম না। ১০ মিনিটের মধ্যেই এসে উপস্থিত হই।’ একটি কক্ষ দেখিয়ে বলেন, ঘটনার সময় এই কক্ষে অনেক শিক্ষার্থী ছিল। এটিসহ দুটি কক্ষ বিধ্বস্ত হয়েছে।
মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজ ক্যাম্পাসে সাতটি ভবন। ক্যাম্পাসে প্রধান ফটকসহ তিনটি ফটক রয়েছে। হায়দার আলী ভবনটি পূর্বপাশে অবস্থিত। প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হয় ভবনের পশ্চিম দিকে।
অভিভাবক-স্বজনদের আহাজারি
সন্তানের খোঁজ না পেয়ে অভিভাবকরা চিৎকার করে কাঁদছেন। কেউ কাউকে সান্ত্বনা দিতে পারছেন না। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান আনিকার মা পারুল আক্তার আর্তনাদ করে বলেন, সকালে ব্যাগ নিয়ে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে এসেছি আমি। ওর খোঁজ পাচ্ছি না। ওর সন্ধান দাও। পারুলকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন অন্যরা। এরই মধ্যে খবর এলো– নুসরাত আর বেঁচে নেই। তার লাশ হাসপাতালে রয়েছে। স্বজনরা শনাক্ত করেছেন। কিন্তু তাৎক্ষণিক নিহত শিশুটির মা পারুলের কাছে মৃত্যুর খবরটি গোপন রাখা হয়।
শিশুর চাচা মনির হোসেন জানান, মাইলস্টোনের পাশেই দিয়াবাড়ীতে তাদের বাড়ি। আবুল হোসেনের তিন মেয়ের মধ্যে নুসরাত সবার ছোট। আমার ভাতিজির লাশ হাসপাতালে ওর বাবা শনাক্ত করেছে।
রাতে আটজনের লাশ হস্তান্তর
নিহতদের মধ্যে আটজনের মরদেহ অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রাত ১টার দিকে আইএসপিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। যে আটজনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে তারা হলেন– ফাতেমা আক্তার (৯), গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট। বরিশালের সামিউল করিম (৯), রজনী ইসলাম (৩৭), মেহনাজ আফরিন হুরায়রা (৯), শারিয়া আক্তার (১৩), নুসরাত জাহান আনিকা (১০), সাদ সালাউদ্দিন (৯) ও সায়মা আক্তার (৯)। আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের মরদেহ মর্গে রয়েছে।
ডিএনএ পরীক্ষার পর লাশ হস্তান্তর
পুলিশ জানায়, নিহত অনেককে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। তাদের শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার পর স্বজনদের নমুনা সংগ্রহ করা হবে। তাদের সঙ্গে যেসব মরদেহ মিলবে এবং পরিচয় নিশ্চিত হবে, তাদের লাশ হস্তান্তর করা হবে।
উদ্ধারকাজের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মুহিদুল ইসলাম জানান, উদ্ধারকাজ প্রায় শেষ। ভেতরে কোনো মিসিং নেই। ফাইটার জেটের ধ্বংসাবশেষও সংগ্রহ করা হয়েছে।
বার্ন ইনস্টিটিউটে যারা
দগ্ধ হওয়া ৩২ জনের একটি তালিকা দিয়েছে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট। তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, দগ্ধদের বেশির ভাগের বয়সই ১০ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে। ৩২ জনের মধ্যে ছয়জন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। তারা হলো– নাফিস, শামিম, শায়ান ইউসুফ, মাহিয়া, আফনান ও সামিয়া। নাফিসের শরীরের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। আইসিইউতে থাকা বাকি পাঁচজনের দগ্ধ হওয়ার পরিমাণ তালিকায় উল্লেখ করা হয়নি।
বাকি ২৬ জনের মধ্যে এরিকসন ও মেহরিনের শরীরের শতভাগ দগ্ধ হয়েছে। দুজনের দগ্ধ হয়েছে ৮০ শতাংশ। তারা হলো– ১৩ বছর বয়সী নাজিয়া ও মাহতাব। ৬২ শতাংশ দগ্ধ হয় ১৫ বছর বয়সী মাকিনের। ৬০ শতাংশ করে দগ্ধ হয় ১৪ বছরের আয়ান ও মাসুমা।
অন্যদের মধ্যে তাসনিয়ার ৩৫ শতাংশ, ১১ বছর বয়সী আরিয়ানের ৫৫ শতাংশ, আশরাফুল ইসলামের ১৫ শতাংশ, রোহান ৫০ শতাংশ, শ্রেয়া ৫ শতাংশ, কাব্য ২০ শতাংশ, ইউশা ৬ শতাংশ ও রূপী বড়ুয়ার ৬ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
এছাড়া তাসমিয়া ৫ শতাংশ, জায়ানা ৮ শতাংশ, সাইবা ৮ শতাংশ, পায়েল ১০ শতাংশ, আবির ২০ শতাংশ, কাফি আহমেদ ১০ শতাংশ, মুনতাহা ৫ শতাংশ, আলবিনা ৫ শতাংশ ও নিলয়ের শরীরের ১৮ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। নওরিন ও মাসুকা নামের দুজনের বয়স কিংবা কতটুকু দগ্ধ হয়েছে, জানা যায়নি।
কোন হাসপাতালে কত হতাহত
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে আটজন, জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ৭০ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনজন, সিএমএইচে ১৭ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একজন, উত্তরার লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে ১১ জন, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ৬০ জন, উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে একজনসহ ১৭১ জন আহত অবস্থায় ভর্তি রয়েছে।
বার্ন ইনস্টিটিউটে দুজনের মরদেহ, ঢাকা মেডিকেলে একজনের, সিএমএইচে ১২ জনের, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে দুজনের, লুবনা জেনারেল হাসপাতালে দুজনের এবং উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে একজনসহ ২০ জনের মৃতদেহ রয়েছে।
বিমানটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছিল
আইএসপিআর জানায়, নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে ঢাকার কুর্মিটোলার বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয় বিমানটিতে। বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের একটি ভবনে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বিধ্বস্ত হয়।
সংস্থাটি বলছে, আহত সবাইকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারসহ অ্যাম্বুলেন্সের সহায়তায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এবং নিকটস্থ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্থানান্তর করা হয়। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনী গভীরভাবে মর্মাহত এবং হতাহতদের সর্বাত্মক চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতায় তৎপর। আইএসপিআর বলেছে, তদন্তের পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবে তারা।
সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডিজি যা বললেন
বিকেল পৌনে ৫টার দিকে দুর্ঘটনাকবলিত এলাকা পরিদর্শনের সময় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহেদ কামাল জানান, ভবনের প্রথম তলায় ছিল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বাচ্চাদের ক্লাস। দ্বিতীয় তলায় ছিল দ্বিতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস। তার সঙ্গে ছিল অধ্যক্ষের অফিস, মিটিং রুম।
একটা কোচিংয়ের ক্লাস চলমান ছিল। দুর্ঘটনার আগে স্কুল ছুটি হয়ে গিয়েছিল। যে জায়গায় আঘাত করে ওই জায়গায় বাচ্চারা জড়ো হয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে হয়তো কিছু অভিভাবকও ছিলেন।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ভাষ্য
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাতটি লাশ শনাক্ত করা যায়নি। তাদের ডিএনএ সংগ্রহ করা হবে। বিশেষ সহকারী বলেন, যারা পুড়েছেন তাদের মধ্যে বেশি বয়সী শুধু উদ্ধারকর্মী, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস কর্মী, দুজন শিক্ষক এবং একজন স্টাফ রয়েছেন। বাকি সবাই শিশু। সাতটি হাসপাতালে রোগীরা ভর্তি আছে। এখন প্রধানত জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি বেশি।