আপনারা কি ওষুধ কোম্পানির দালাল, ডাক্তারদের প্রশ্ন করলেন আসিফ নজরুল
- ১৬ আগস্ট ২০২৫, ১৯:৪৪

চিকিৎসকদের অনেকেই তাদের রোগীদের স্বার্থ না দেখে ওষুধ কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ কিনতে রোগীদের বাধ্য করা হয়। পৃথিবীর কোন দেশে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির জন্য ডাক্তারের আলাদা সময় বরাদ্দ থাকে? বলেন তো, আপনারা কি ওষুধ কোম্পানির দালাল? নিজেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আপনারা?’
শনিবার রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএইচসিডিওএ) নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক ও বার্ষিক সাধারণ সভায় এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিপিএইচসিডিওএর সভাপতি ডা. মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান।
এ সময় হাসপাতালের সেবার মান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘একজন নার্স যদি ১২ হাজার টাকা বেতন পায়, তবে সে কীভাবে মেজাজ ঠিক রেখে ভালো সেবা দেবে?’ এই সমস্যা সমাধানে হাসপাতাল মালিকদের কম মুনাফা করার আহ্বান জানান তিনি।
আইন উপদেষ্টা বলেন, চিকিৎসকদের বিষয়ে কিছু সাধারণ অভিযোগ প্রায়ই শুনি। অনেকে ভালোভাবে রোগীর কথা না শুনেই ব্যবস্থাপত্র দেন এবং অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা দেন। এই অত্যাচার বন্ধ করুন। মানুষ অনেক গরিব। বড়লোকদের গলা কাটেন সমস্যা নেই, কিন্তু গরিব রোগীদের ১৪-১৫টা টেস্ট দেওয়া বন্ধ করুন।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আমার বাসায় একটা ছেলে ছিল, আমার সাহায্যকারী হিসেবে। সে গিয়েছিল ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। তাকে ১৪টা টেস্ট দেওয়া হয়েছিল। পরে সে রাগ করে ঢাকার বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নেয়। একটা টেস্টও লাগেনি, তবু সে সুস্থ হয়ে গেছে।
সভায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে অন্যায় মুনাফা করা বন্ধ করতে হবে। আপনারা অনেক টাকা বিনিয়োগ করেন, সেজন্য যুক্তিসঙ্গত মুনাফা অবশ্যই প্রয়োজন। তবে সেটা অন্যায়ভাবে হওয়া উচিত নয়।’
তিনি বলেন, সরকারের পাশে বেসরকারি খাত না দাঁড়ালে স্বাস্থ্যসেবা পুনর্গঠন সম্ভব নয়। আমাদের অঙ্গীকার, দেশের ১৮ কোটি মানুষকে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও মানুষ ফ্লোরে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বলেন, আমরা অতীতের দুঃখগাথা গাইতে চাই না। এজন্যই একটি পরিকল্পনা জাতির সামনে উপস্থাপন করেছি। দেশের বিভিন্ন স্তরের বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রূপান্তর ও কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার।
তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতিবছর লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়, যা ১৫ থেকে ২০ হাজার প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি কঠিন কাজ। এটি যৌক্তিক নয়। লাইসেন্স নবায়নের জন্য একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ নির্ধারণ করা উচিত এবং যথাযথ পরিদর্শনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। আমরা ক্রসচেক করে দেখেছি, বর্তমানে পরিদর্শনগুলো যথাযথ হয় না।
বিপিএইচসিডিওএর সাধারণ সম্পাদক এবং ল্যাবএইড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীম বলেন, ভুল চিকিৎসা বা অবহেলায় চিকিৎসক বা হাসপাতাল মালিকদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা ও গ্রেপ্তার না করার অনুরোধ জানাই। তদন্ত করে ব্যবস্থা নিলে আমাদের আপত্তি নেই।
তিনি আরও বলেন, আমরা একটি ডিজিটাল ডেটাবেজ তৈরি করব, যেখানে সব হাসপাতাল মালিকের তথ্য থাকবে। আমাদের বর্তমানে ২৬০০ সদস্য আছে, শিগগিরই আমরা ৩-৪ হাজার সদস্য করব। নিবন্ধিত হাসপাতাল ছাড়া কেউ আমাদের সদস্য হতে পারবে না। নিম্নমানের ও নিয়ম না মানা প্রতিষ্ঠানকে আমরা সদস্য করব না।