শুল্ক ১৫ শতাংশের নিচে নয়, ঢাকার বৈঠক মঙ্গলবার

শুল্ক ১৫ শতাংশের নিচে নয়, ঢাকার বৈঠক মঙ্গলবার

পাল্টা শুল্ক নিয়ে দরকষাকষির তৃতীয় দফা আলোচনার জন্য অবশেষে সময় দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কার্যালয়। আগামী মঙ্গলবার ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঢাকার সরকারি পর্যায়ে বৈঠকটি হবে। 

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, শুল্ক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) দপ্তরের সঙ্গে সভা আগামী ২৯ জুলাই হবে। সভা অনলাইন কিংবা সরাসরি উপস্থিতির মাধ্যমে হতে পারে। ইউএসটিআরের পক্ষ থেকে এভাবে জানানো হয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে শিগগিরই জানাবে। মুখোমুখি বৈঠক হলে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল তার আগেই ওয়াশিংটন যাবে। অবশ্য গতকাল সকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছিলেন, শুক্রবার (আজ) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অনলাইনে একটি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, আগামী ১ আগস্ট থেকে বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানিতে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হতে যাচ্ছে, তার হার হবে সর্বনিম্ন ১৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ। ট্রাম্প প্রশাসন ইতোমধ্যে কিছু দেশের ওপর ঘোষিত বাড়তি শুল্কহার কমিয়েছে। সর্বশেষ গত বুধবার জাপানের হার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করেছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অন্যতম প্রতিযোগী ভিয়েতনামের হার ২৬ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। যাদের ক্ষেত্রে কমানো হয়েছে, তাদের সঙ্গে আলাদা চুক্তি হয়েছে, যার মূল লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে সেই দেশে আমদানি বাড়ানো। 

বাংলাদেশের সঙ্গে এখনও কোনো চুক্তি হয়নি। দরকষাকষি চলছে। বাংলাদেশের ওপর ১ আগস্ট থেকে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা রয়েছে। বাংলাদেশ আলোচনার মাধ্যমে তা কমানোর চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ ছাড় পেতে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি বাড়ানোর জন্য একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে। গত বুধবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে জিটুজি পদ্ধতিতে বাড়তি দামে দুই লাখ ২০ হাজার টন গম কেনার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি আমদানি বাড়ানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে রাজি হয়েছে। সে দেশ থেকে উড়োজাহাজ কিনতে চেয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রধান প্রধান পণ্য আমদানিতে শূন্য শুল্ক এবং কম শুল্ক রাখার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। কিন্তু বাণিজ্যের বাইরে কিছু শর্ত নিরাপত্তা ও ভূকৌশলগত কিছু ইস্যুতে বাংলাদেশ আগের আলোচনায় সম্মত হয়নি। 

দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে কিছু করা হবে না: বাণিজ্য উপদেষ্টা 
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কমানোর জন্য সরকার চেষ্টা করছে। তবে বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে কোনো কাজ করা হবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা গত পরশুদিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রীকে করণীয় সম্পর্কে চিঠি দিয়েছি। এখন আমরা সেই চিঠির জবাব ও আমন্ত্রণের অপেক্ষায় আছি।’ 

১ আগস্ট তো খুব কাছাকাছি এবং এ সময়ের মধ্যে কোনো ভালো ফলাফল আসবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষষটি আমাদের জন্য যেমন প্রয়োজন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও তেমন প্রয়োজন। আমাদের কর্মকাণ্ডে কোনো স্থবিরতা নেই। আমাদের কর্মকাণ্ড যথেষ্ট গতিশীল। আমরা আমাদের অবস্থান সঠিকভাবে তুলে ধরেছি। আমরা ভালো কোনো কিছু প্রত্যাশা করছি। এর জন্য যা করণীয়, তাই করছি।’

ব্যবসায়ীদের পক্ষে থেকে লবিস্ট নিয়োগের আলোচনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, এটি ব্যবসায়ীদের এখতিয়ার। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো লবিস্ট নিয়োগ করা হয়নি। একটা জিনিস বুঝতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয়ভাবে জরুরি বিষয় হিসেবে শুল্ক আরোপের বিষয়টি এনেছে। যে কাঠামোর ওপরে ঘটনাটি ঘটছে, তাতে লবিস্টদের করার কোনো কিছু আছে কিনা জানি না। 

তিনি বলেন, আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে পরিবর্তন আনতে হবে। পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কেউ বুঝতে পারবে না। এ পরিবর্তনে অনেক ধরনের আইনি প্রক্রিয়া আছে। আইনি প্রক্রিয়াগুলো একজন লবিস্টের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় বলে তাঁর ধারণা। সরকারের অনেক মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করছে। ১৫ দিন দিন-রাত কাজ হয়েছে। 

বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে যুক্তরাষ্ট্রকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আমার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য নেই। বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে কেন কাজ করব। এটি সম্পূর্ণ অবান্তর প্রশ্ন। স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার প্রশ্ন এলে এত পরিশ্রমের দরকার কেন? 

সর্বনিম্ন শুল্ক হবে ১৫ শতাংশ: ট্রাম্প 
ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার ওয়াশিংটনে এক সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের একটি সরল ও সহজ শুল্ক থাকবে, যা ১৫ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে হবে। কিছু দেশের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ হবে। কারণ, তাদের সঙ্গে খুব একটা বনিবনা হচ্ছে না।’ 

ট্রাম্প বলেন, কিছু দেশের জন্য খুব সাধারণ শুল্ক থাকবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ছিল। যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসার জন্য দরজা খুলতে সম্মত হয়, তবে তাদের পণ্যে কম শুল্ক আরোপ করা হবে।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ